সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
দেশের বৃহত্তম লবণ উৎপাদন জোন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ মোট ৬৯ হাজার ৪১৫ একর জমিতে প্রায় ৪০ হাজার চাষী চলতি মৌসুমে লবন চাষে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে লবণ মাঠ পরিচর্যা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আগামী জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হবে।
সূত্র জানায়, দেশের এক তৃতীয়াংশ লবণের চাহিদা পুরণ করে কক্সবাজারের উৎপাদিত লবণ। গত বছর এতদাঞ্চলে নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও চাষিরা লক্ষমাত্রার কাছাকাছি লবণ উৎপাদনে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ঘন ঘন দূর্যোগ ও বৈরী আবহাওয়া ছিল গত বছর। তবে এবার লবণের মূল্য কম থাকায় চাষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। জানুয়ারী মাস থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন চলবে। এতদাঞ্চলে দুই ধরনের পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হয়। একটি হলো সনাতন পদ্ধতি কালো লবণ, অপরটি পলিথিন পদ্ধতিতে সাদা লবণ। পলিথিন পদ্ধতিতে চাষীরা লাভবান হওয়ায় এখন দিন দিন পলিথিন পদ্ধতির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে কালো লবণের দাম মণপ্রতি প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, সাদা লবণ ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে চাষীরা হোচট খাবেন বলে অভিযোগ তুলেছেন গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সহ সভাপতি সাইফুদ্দীন। তিনি জানান, উৎপাদিত লবণ চলতি বছরে দেশের চাহিদা মিটাবে কিনা তা সন্দেহ রয়েছে। কেননা সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর বেড়িবাঁধ এখনো মেরামত হয়নি। বিশাল লবণ উৎপাদন জোন গোমাতলীতে হাজার হাজার একর লবণ মাঠে চলছে জোয়ার-ভাটা। এব জমিতে চলতি বছর চাষিরা লবণ উৎপাদনে সন্দিহান।
কক্সবাজার বিসিক সংশ্লিষ্টরা জানায়, জেলার ৮ উপজেলার উপকুলীয় এলাকায় পলিথিন পদ্ধতিতে চাষীদের মনোযোগী করতে পারলে উৎপাদন আরো বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয় চলতি মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম সন্তোষ জনক না থাকায় চাষীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
লবণ চাষীরা জানায়, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কম। লবণ চাষীদের পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ চাষ করার জন্য আরো উদ্বুদ্ধ করতে পারলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের হার আরো বেড়ে যাবে। তাতে করে দেশে লবণের চাহিদা পুরণ করে বিদেশে রপ্তানী করা যাবে।
ইসলামপুর লবণ মিল মালিকরা জানান, দেশের একটি মুনাফালোভী চক্র প্রতিবছর সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির অশুভ পাঁয়তারা করে থাকে। যা দেশের লবণ শিল্পে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। যদি নানা অজুহাতে লবণ আমদানি করা হয় তা হলে লবণের ন্যার্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন।
লবণ চাষীদের দাবী অবিলম্বে কক্সবাজারে স্থায়ী লবণ বোর্ড গঠন করে মাঠ পর্যায়ে লবণের মূল্য নির্ধারণ, প্রান্তিক লবণ চাষীদের সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণদান ও বিদেশ থেকে লবণ আমদানী পারমিট বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষা করতে হবে। প্রান্তিক লবন চাষীরা দেশের অর্থনীতি ও লবণ শিল্পকে ধংসের হাত থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে সরকারীভাবে লবন ক্রয়ের ব্যবস্থা করে লবণের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবী জানান।
পাঠকের মতামত: